হিন্দুদের বাড়ি, মন্দির ‘জ্বালানো’র ভুয়া খবর ভারত থেকে ছড়ানো হয়
- আপডেট সময় ০৮:৩৪:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪
- / ৬৬৪ বার পড়া হয়েছে
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে যে সহিংসতা চলেছিল সেদেশে, তার মধ্যেই এমন বহু ভুয়া পোস্ট ভারতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দাবি করা হয় যে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপরে ব্যাপক অত্যাচার শুরু হয়েছে।
বিবিসির তথ্য যাচাই বিভাগ বিবিসি ভেরিফাই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের অনেকগুলো যাচাই করে দেখেছে, যাতে দেখা গেছে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি অনেক হামলার গুজবও ছড়ানো হয়েছে।
এর মধ্যে, শনিবার বাংলাদেশে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নামে দুইটি সংগঠন দাবি করেছে, শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের ৫২টি জেলায় সংখ্যালঘু মানুষের ওপর ২০৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
তবে এই সব কয়টি ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হামলা হয়েছে, নাকি সরকার ঘনিষ্টদের ওপর ক্ষোভের অংশ হিসেবে হামলা হয়েছে, তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই সম্ভব হয়নি।
এদিকে, বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু এবং সেদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে একটি বিশেষ কমিটি গড়েছে ভারত সরকার।
আর বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠার পর দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় রবিবার থেকে হটলাইন চালু করতে চাইছে সেদেশের সরকার।
সামাজিক মাধ্যমে গুজব যেভাবে
বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে ‘ব্যাপক অত্যাচার’ হচ্ছে বলে যেসব ভুয়া পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার বেশিরভাগই ভারতীয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছিল বলে ফ্যাক্ট-চেকাররা নিশ্চিত করেছেন।
কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকেও এধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে, এমনটাও ফ্যাক্ট-চেকাররা বলছেন।
তারা এটাও বলছেন যে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে কিছু আক্রমণ হয়েছে, বাড়িঘর জ্বালানো হয়েছে। কিন্তু তথ্য যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে মুসলমানদের বাড়িঘরও ভাঙচুর করা হয়েছে, জ্বালানো হয়েছে।
এক্ষেত্রে আক্রমণকারীদের লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, সম্পত্তি। ধর্মীয় পরিচয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গৌণ ছিল, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্যই তারা আক্রান্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের যেসব স্থানীয় নেতা-কর্মী পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন অথবা আসার চেষ্টা করছেন, তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে হিন্দু আর মুসলমান – উভয় সম্প্রদায়ের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতেই হামলা হয়েছে।
কিন্তু ভারত থেকে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টিকে রাজনৈতিক না রেখে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন একাধিক ফ্যাক্ট চেকার।
বিবিসির তথ্য যাচাইয়ের বিভাগ, ‘বিবিসি ভেরিফাই’-ও একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।
মন্দির পাহারায় মইনুল
হিন্দু মন্দিরে আক্রমণ হয়েছে বলে যে ধরণের পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল, তার কয়েকটি চোখে পড়েছিল চট্টগ্রামের এক বিক্ষোভকারী মি. মইনুলের।
বিবিসির তথ্য যাচাই বিভাগ ‘বিবিসি ভেরিফাই’ যখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করে, তিনি সেসময়ে চট্টগ্রাম লাগোয়া ‘শ্রী শ্রী সীতা কালী মাতা মন্দির’ পাহারা দিচ্ছিলেন।
তার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা।
মি. মইনুল বলছিলেন, “তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব তো আমাদের। আমরা সব সরকারি স্থাপনা, মন্দির, গির্জা – সব কিছুই রক্ষা করব।“
তার কথায়, যেসব পোস্ট ছড়াচ্ছে, সেগুলো কিন্তু “আমাদের চোখে দেখা বাস্তব ছবির সঙ্গে মিলছে না। ওই সব পোস্ট বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ সম্বন্ধে একটা ভুল ছবি তুলে ধরছে।“
বিক্ষোভকারীদের ওপরে ব্যাপক নির্যাতন ও হত্যার শেষে যখন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেন, বিক্ষোভকারী ও বিরোধী দলীয় সদস্যদের ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠা খুব আশ্চর্যের কিছু ছিল না।
অন্যদিকে, থানাগুলিতে আক্রমণ হওয়ার ফলে পুলিশ ছিল না পুরো বাংলাদেশেই। এই সময়েই সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘরে লুট চলে, সহিংসতা শুরু হয়।
তবে বাস্তবে দেখা গেছে, যে সাধারণ নাগরিকদের বাড়িতেও লুট চলেছে, তাদেরও কেউ কেউ সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
‘বিবিসি ভেরিফাই’ মনে করছে ব্যাপক সহিংসতার ফলেই সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
ভারত থেকে ছড়ানো হয় ভুয়া খবর
চারদিকে যখন একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছিল, সেই সময়ে ভারতের অতি-দক্ষিণ-পন্থী ‘ইনফ্লুয়েন্সর’রা সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্তিকর ভিডিও শেয়ার করতে থাকেন, যাতে মনে হয় যে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে অত্যাচার হচ্ছে। এ ছাড়া এরকম গুজবও ছড়ানো হয় যে ছাত্র-বিক্ষোভকারীরা ‘ইসলামি কট্টরপন্থী’।
সামাজিক মাধ্যমের ওপরে নজর রাখে ‘ব্র্যান্ডওয়াচ’ অ্যাপ। তারা খুঁজে পেয়েছে যে চৌঠা অগাস্টের পর থেকে ভুয়া কাহিনীগুলি ছড়ানো হয়েছে এমন একটি হ্যাশট্যাগ দিয়ে, যেটি সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) সাত লক্ষ বার মেনশন হয়েছে।
যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রেন্ডিং পোস্টগুলি করা হয়েছিল, তার প্রায় সবই ভারতে অবস্থান করছে, এমনটাও জানা গেছে ‘ব্র্যাণ্ডওয়াচ’ থেকে।
বাংলাদেশ ভিত্তিক ফ্যাক্ট-চেকাররাও গত কদিনের সামাজিক মাধ্যম বিশ্লেষণ করে অনেকটা একইরকম তথ্য পেয়েছেন যে মূলত ভারতের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকেই হিন্দুদের ওপরে আক্রমণের ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বা ইউল্যাবের অনুমোদনপ্রাপ্ত স্বাধীন তথ্য যাচাই করার উদ্যোগ ‘ফ্যাক্ট ওয়াচ’এর প্রধান, অধ্যাপক সুমন রহমান বলছিলেন, “কিছু ঘটনা ঘটেছে ঠিকই, যেখানে হিন্দুদের বাড়ি আক্রমণ করা হয়েছে। তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ওই ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি।”
“কিন্তু এমন একটা আখ্যান তৈরি করা হয়েছে, যাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হচ্ছে। এটা একেবারেই ভুল আখ্যান ছড়ানো হয়েছে। যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে এই ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে, সেগুলির বেশিরভাগই ভারতের,” বলেন তিনি।
আবার ঢাকার ‘দৈনিক আজকের পত্রিকার’ ফ্যাক্ট চেকার রিদওয়ানুল ইসলাম বলছিলেন ভারতীয় অ্যাকাউন্টগুলি থেকেই বেশিরভাগ ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
“তবে বাংলাদেশের ভেতর থেকেও হিন্দুদের ওপরে আক্রমণের ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে বলে আমাদের অনুসন্ধানে জানতে পারছি।” হিন্দুদের বাড়ি, মন্দির ‘জ্বালানো’র ভুয়া খবর
সামাজিক মাধ্যমে একটা পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল, যাতে দাবি করা হয়েছিল যে ‘হিন্দু ক্রিকেটার’ লিটন দাসের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্য অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে সেই পোস্ট শেয়ার করে লেখা হয় যে কট্টর ইসলামপন্থীরা তার বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যে বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছিল, সেটা যে আসলে বাংলাদেশের জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তার্জার, তা এখন সবার জানা।
আরেকটি ভাইরাল হওয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছিল যে ‘বাংলাদেশের ইসলামি জনতা’ একটা মন্দিরে আক্রমণ করেছে।
চট্টগ্রামের ‘নবগ্রহ মন্দির’এর কাছে আগুন লাগানোর ভিডিও ছড়ানো হয়েছিল। তবে দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে মন্দিরে আগুন লাগে নি।
বিবিসি ভেরিফাইয়ের কাছে ছবি এসেছে যে, ওই মন্দিরের কোনও ক্ষতি হয় নি। তবে ওই মন্দিরের পিছনে আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়ই আসল লক্ষ্য ছিল বলে মনে হয়েছে।
মন্দিরের কর্মকর্তা স্বপন দাস বিবিসিকে জানিয়েছেন, ওই দলীয় কার্যালয় থেকে চেয়ার-টেবিল বার করে আগুন লাগানো হয়েছিল মন্দিরটির পিছন দিকে। এই ঘটনা পাঁচই অগাস্ট দুপুরের।
অগ্নিকাণ্ডের পরের কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে যে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছবি সহ বেশ কিছু পোস্টারও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
মি. দাস আরও জানিয়েছেন যে ২৪ ঘণ্টাই মন্দিরে পাহারা দিচ্ছেন মানুষ।
লক্ষ্য আওয়ামী লীগ, হিন্দুরা নয় আরও দুটি ভাইরাল হওয়া পোস্টে দেখা গেছে যে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে দাবি করা হয়েছে যে হিন্দুদের ওপরে আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু যাচাই করে দেখা গেছে যাদের ওপরে আক্রমণ করা হয়েছিল, তারা আসলে আওয়ামী লীগের নেতা এবং তারা মুসলমান।
এইসব পোস্টই ভারতীয় দক্ষিণ-পন্থী অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ‘সেভবাংলাদেশীহিন্দু’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে সেসব শেয়ার করা হয় হিন্দুত্ববাদীদের ‘ভেরিফায়েড’ অ্যাকাউন্ট থেকে।
সম্প্রতি আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে ‘ইসলামি জনতা’ হিন্দুদের গ্রাম আক্রমণ করেছে এবং একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুকুরে সাঁতার কেটে পালানোর চেষ্টা করছে। ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকাররাই খুঁজে বার করেছেন যে ওই ব্যক্তি মুসলমান।
ইউল্যাবের ‘ফ্যাক্ট-ওয়াচ’এর প্রধান, অধ্যাপক সুমন রহমান বলছিলেন, “সম্প্রতি দুই নারীকে কিডন্যাপের কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। এর মধ্যে একটি ঘটনা ঢাকার, অন্যটি নোয়াখালির। ঢাকার ঘটনাটি হল একটি ছাত্রী রাস্তায় ট্র্যাফিক ডিউটি করছিল দীর্ঘক্ষণ। তার বাবা মা-ই জোরপূর্বক তাকে বাড়ি নিয়ে যান।”
অধ্যাপক রহমান বলেন, “সেই ভিডিওকে বলা হল যে ওই ছাত্রীকে নাকি কিডন্যাপ করা হয়েছে। আর নোয়াখালির ঘটনায় যে নারীকে কয়েকজন ‘গণধর্ষণ’-এর জন্য কিডন্যাপ করা হয়েছে বলা হচ্ছে,আসল ঘটনা হল ওই হিন্দু নারী প্রাক্তন স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে নিজের বাবা-মায়ের কাছে থাকছিলেন।
কিন্তু তার স্বামী কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ওই নারীকে উঠিয়ে নিয়ে যান। এটাকে ‘হিন্দু নারীকে গণধর্ষণের জন্য কিডন্যাপ’ বলে চালানো হয়েছে,” বলছিলেন মি. রহমান।
দৈনিক আজকের পত্রিকার ফ্যাক্ট-চেকার রিদওয়ানুল ইসলামের কথায়, “শুধু যে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তা নয়। কয়েকটি টিভি চ্যানেল এবং পোর্টালও সামাজিক মাধ্যমের ওই সব গুজবের ওপরে ভিত্তি করে সংবাদ প্রতিবেদন পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছে।“
যে কয়েকটি টিভি চ্যানেল এবং পোর্টালর নাম তিনি নিলেন, সেগুলো সবই পরিচিত হিন্দুত্ববাদী সংবাদ মাধ্যম।
বিবিসি এটাও জানতে পেরেছে যে শুধু ভারত বা বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাজ্যের এক পরিচিত অতি-দক্ষিণপন্থী ইনফ্লুয়েন্সারও এধরণের গুজব ছড়িয়েছেন।
টমি রবিনসন নামের ওই ইনফ্লুয়েন্সার যাচাই না করা নানা ভিডিও ছড়িয়ে লিখেছেন যে বাংলাদেশে ‘হিন্দুদের গণহত্যা চলছে’।
দুই সরকার যা ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপরে ব্যাপক আক্রমণ হচ্ছে, এই তথ্যের প্রেক্ষিতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন, যারা বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিক, হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবেন।
ওই কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, অতিরিক্ত মহা পরিচালক রভি গান্ধীকে। অন্য সদস্যরা হলেন বিএসএফের দক্ষিণ বঙ্গ এবং ত্রিপুরা সীমান্ত অঞ্চলের দুই আইজি এবং ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির দুই প্রতিনিধি।
অমিত শাহ এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু এবং সেদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিশেষ কমিটি গড়ল ভারত সরকার।
“এই কমিটি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে যাতে সেখানে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক, হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে। বিএসএফের পূর্ব কমান্ডের এডিজি এই কমিটির প্রধান হবেন,” লিখেছেন অমিত শাহ।
ওই কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে জানিয়েছেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী যেরকম টুইটে লিখেছেন, বাংলাদেশে কেউ সমস্যায় আছেন, এরকম খবর পেলে আমরা সেদেশে আমাদের কাউন্টারপার্ট, অর্থাৎ বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা মেটানোর কাজ করব। যেরকম শুক্রবার একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল কোচবিহারের শিতলখুচিতে। বাংলাদেশের দিকে বহু মানুষ ভারতে প্রবেশ করতে চেয়ে সীমান্তের অপর পাড়ে জড়ো হয়েছিলেন। আমরা বিজিবির সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। শনিবার কিন্তু এভাবে কেউ জড়ো হয় নি।”
তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে এ ধরণের সংবাদ প্রচার হলেও, বাংলাদেশ থেকে এটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভারতীয় অংশ থেকে পোষ্ট করা কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, সীমান্তের ওপারে কিছু মানুষ জড়ো হয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে নারী বা শিশু ছিলেন না।
এবং ওই ব্যক্তিদের কাছে ব্যাগ জাতীয় কিছু দেখা যায়নি। তারা সীমান্ত পাড়ি দিতে জড়ো হয়েছিলেন কীনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও হিন্দুদের সহায়তার জন্য রবিবার থেকে একটা হটলাইন চালু করছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার এ কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
তিনি বলেন, কোথাও যদি সংখ্যালঘুদের ওপর কোনও হামলা বা সহিংসতার ঘটনা ঘটে হটলাইনে জানালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবেন তারা।
“ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, উপাসনালয়ে হামলার খবর আসছে” মন্তব্য করে মি. হোসেন বলেন, “সরকারকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা চলছে”।
“এর সাথে গুজবও যুক্ত হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, যে কোনও মূল্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে চায় সরকার।
‘আমরা ফাঁদে পা দেব না’ চট্টগ্রামের ‘শ্রী শ্রী সীতা কালী মাতা মন্দির’-এর বাইরে মুসলমান আর হিন্দু ছাত্ররা কথা বলছিলেন সম্প্রীতি নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে।
“এই সব গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্য হল একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করা, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করা,” বলছিলেন মি. মইনুল।
“তবে আমরা ফাঁদে পা দেব না,” জানালেন তিনি।
এলাকার আরেক বাসিন্দা ছোটন নিয়মিত ওই মন্দিরটিতে যান। তিনি তার মুসলমান পড়শিদের ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন।
“তাদের ধন্যবাদ। যতক্ষণ না এই কঠিন সময়টা আমরা পার করতে পারছি, ততক্ষণ যেন তারা এভাবেই পাশে থাকেন।
“স্বাধীন বাংলাদেশে ভবিষ্যতেও যেন আমরা এভাবেই একসঙ্গে কাটাতে পারি,” বললেন ছোটন।
তথ্য সহায়তা : জ্যাকি ওয়েকফিল্ড, শ্রুতি মেনন, জয় চেথাম, কুমার মালহোত্রা। বিবিসি বাংলা